13 January, 2017
0 Comments
1 category
n
n
n
n
nআমরা বাঙ্গালী সকল খুবই ইন্টেলেকচুয়াল জাতি। পৃথিবীর এমন কোন কুল-কিনারা ও সমস্যা নাই যাহা বাঙ্গালীর অসীম ক্ষমতাশালী মস্তিষ্ক হইতে উদ্ধার পায়। তবে আমি একটু মূর্খ আছি। জাতিগত বৈশিষ্ট্যের ব্যতিক্রম ঘটাইয়া আমি একখানি অতি ক্ষুদ্রকায় মস্তিস্ক লইয়া জন্মাইয়াছি। তাই আমার দৃষ্টি ও চিন্তার দৌড় বাঙ্গালীর জীবন যাপনের চৌহদ্দী পর্যন্ত সীমিত বেশিরভাগ সময়। আপাতত আমি আমার এবং আমার পড়শির ঘুমানো এবং পয়ঃনিষ্কাশনের স্থান ও এর পরিবেশজনিত সমস্যা লইয়া ভাবিতেছি।
n
nকিছুদিন পূর্বে আমি টিএসসি গিয়াছিলাম একটি বিশেষ প্রয়োজনে। গিয়া প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে হইল। সেই মত উপস্থিত হইলাম টয়লেটে। তিনটি টয়লেট দেখিয়া আনন্দে উদ্বেলিত হইয়া একটির দরজা খুলিয়া প্রায় ধাক্কা খাইয়া ফিরিয়া যাইতে লাগিলাম। কারণ দেখিলাম কমোড উপচাইয়া উন্নত মানের পায়খানা দাঁত কেলাইয়া আমার দিকে চাহিয়া আছে। পাশের ফ্লাশের হাতলটি ভাঙ্গা। আরেকটি ডাউন টয়লেটে কোন নারী প্যাড ফেলিয়া রাখিয়াছে এবং সেখানেও পায়খানা। শেষ ভরসা তৃতীয়টি। ভগবানের নাম লইয়া ঢুকিয়া পড়িলাম, যেহেতু আর কোন চয়েস নাই। ঢুকিয়াই দুর্গন্ধে মৌতাত এবং রোমান্টিক প্রেমিক যুগলের পছন্দ আলো-আঁধারির খেলাময় এক পরিবেশ দ্বারা আবৃত হইলাম। যেহেতু আসিয়াই টুপ করিয়া বসিয়া পড়িয়াছি তাই উঠিবার আর উপায় নাই। আমার অবাধ্য চক্ষুদ্বয় চারিদিকে অবলোকন করিতে লাগিল। দেখিলাম শুকনা-আধা শুকনা পায়খানা টয়লেট প্লেটের নানা জায়গায় শৈল্পিক নকশা লইয়া মূর্তিমান হইয়া আছে। আমি শিহরিত হইয়া কুকড়াইতে লাগিলাম স্পর্শ বাঁচাইবার তাগিদে। প্লেটের চারিপাশে ব্যবহৃত, কুঁচকানো ময়লাযুক্ত টিস্যুর ছড়াছড়ি। দুইটি পানির ট্যাব, তাহার একটি পূর্ণাঙ্গ অকেজো এবং আরেকটি হইতে অল্প পানি নিষ্কাশিত হইতেছে। ফ্লোরটি এমনই অপরিষ্কার বুঝিতে কষ্ট নাই, ৯০’র গণআন্দোলনের পরে এখানে কেউ ঝাড়ু লাগায় নাই। ভাবিলাম, এখানে আরো ৫-১০ টি মিনিট আমাকে যেহেতু কাটাইতে হইবে ভাবিয়া বাহির করি কেন এই সকরুণ অবস্থাঃ
n
n১। এখানকার ঝাড়ুদার ও মেথরগণ ব্যাপক স্বাধীনতা ভোগ করে। ৭১’এ যখন বাংলাদেশ স্বাধীন হইল, তাহারা শুনিল, তাহারা স্বাধীন হইয়া গিয়াছে।
n
n২। এখানকার কর্তৃপক্ষের আবাসস্থল কার্যালয়ের অতি নিকটে। তাই তাহাদের কার্যালয়ে আসিবার এবং তত্ত্বাবধানের কোন প্রয়োজন আছে বলিয়া মনে করেন না তাহারা। তাহারাও মেথরগণের সাথে স্বাধীন হইয়া গিয়াছে বলিয়া ভাবিতেছে।
n
n৩। এখানকার শিক্ষক ও পরিচালকমণ্ডলী রাজনীতি করিতে ব্যস্ত। তাহার টিএসসি আসিবেন কখন?
n
n৪। বাকি থাকিল সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্য ও শিক্ষার্থীগ্ণ। সাংস্কৃতিক সংগঠনের সদস্যগণ এ্যতই ব্যস্ত তাহারা নাটক আর কবিতার লাইন মাথায় লইয়া উক্ত স্থানে প্রবেশ করেন এবং কর্ম সম্পাদন করেন, তাহাদের গু-মুত প্লেটে পড়িলো না ফ্লোরে পড়িলো তাহা তেমন গুরূত্বপূর্ণ নয়। শরীর হইতে নিষ্কাশিত হইলেই হইল। ৫ মিনিটেরই তো ব্যপার। এই পৃথিবীর রূপ-রস-গন্ধ-মানবতা-আর্ট-কালচার বাদ দিয়া সামান্য টয়লেট নিয়া ভাবিয়া জীবন ক্ষয় করিবার কোন মানে হয় কি?
n
n৫। আর যেসকল শিক্ষার্থী রাজনীতি করেন, তাহাদের একটি ক্ষমতাসীন অংশ এখানে আসেনই না, তাহারা টিএসসি’র মত জায়গায় যদিওবা আসেন, ইহার এই অংশে কোনক্রমেই হয়তো আসিবেন না। আসিলেও বিপদ। আসিয়া যদি বুঝিতে পারেন, ইহা সংস্কার করিতে হইবে, তাহা হইলে উহার টেন্ডার লইয়া টানাটানি, মারামারি পর্যন্ত হইতে পারে স্বদলে দুই গ্রুপে।
n
nআরো আসিতে পারেন আরেকশ্রেনীর রাজনীতিবাজ শিক্ষার্থী যাহারা চে-বাজ। চে’র ছবি অঙ্কিত বা নাম লিখিত গেঞ্জি পরিয়া চোখে মোটা চশমা পরিয়া বা না পরিয়া তাহারা দেশ ও জাতি উদ্ধারে রত হন কিন্তু প্রাকৃতিক কর্ম সম্পাদন করিয়া জল ব্যবহার করিতে ভুলিয়া যান। উহারা দেশ-সমাজ-জাতি উদ্ধার ও পুঁজিবাদী মার্কিন সাম্রাজ্য উৎপাটন চেষ্টায় এবং আন্দোলনে এতই ব্যস্ত এই ছোট্ট একটি সমস্যা তাহাদের চোখেই পরে না। তাহাদের ধারণা একবার বিপ্লব নামক ফলটি আকাশ হইতে পড়িলে ধরিত্রী তখনই বৈষম্যহীন আর আবর্জনাহীন হইয়া যাইবে। কিন্তু আবর্জনা যে মনে এবং টিএসসি নামক তাদের অতি প্রিয় আশ্রয়েও হইতে পারে তাহা তাহাদের অতিশয় ঊর্বর মস্তিস্কে স্থান পায় না।
n
nযাহা হউক ইতোমধ্যে আমার কর্ম সম্পাদন হইয়া গিয়াছে। সাধারণের তুলনায় বেশি জল খরচ করিয়া বন্ধুকে আসিয়া বলিলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত একটি জায়গার টয়লেট কেন অপরিষ্কার এবং এই বিষয়টি কেন অবহেলিত, ইহা ভাবিবার বিষয়। কিন্তু কে ভাবিবে! আমার মত ক্ষুদ্র মানুষ পারিবে না। তাই উগ্রাইয়া দিলাম। আপনারা ভাবিতে থাকেন। কোন ব্যক্তির ঘুমানো এবং প্রাকৃতিক কর্ম সম্পাদনের স্থান যদি অত্যন্ত পরিষ্কার হয়, বুঝিতে হইবে তিনি পরিষ্কার ও উন্নত মনের। আর কিছু কি বলিবার প্রয়োজন আছে?
n
Category: ফানপোস্ট

