0 Comments

n

n

n

n

n

n

n

n

n[link|http://www.imdb.com/title/tt1907679/|গেরিলাকে ভোট দিটে ক্লিক করুন এখানে]

n

n

n
nকাল “গেরিলা” দেখলাম বলাকায়।জীবনের প্রথম হলে গিয়ে চলচিত্র দেখা। তাই ভাবলাম এমন একটি চলচিত্র দেখবো যা আজীবন স্মরনীয় হয়ে থাকবে।
n
nএ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যত ছবি তৈরি হয়েছে দেশে তার সবই দেখেছি।যদিও আমি সাধারণ দর্শকমাত্র তবুও চোখ বুজে বলে দিতে পারি কোনটা ভাল বা মন্দ লাগার।কারণ চলচিত্র শিল্পের সবচেয়ে স্পস্ট প্রকাশ এবং বৃহৎ মাধ্যম।
n
nমানের কথা বলতে গেলে সাদাচোখে নাসিরউদ্দীন ইউসুফ অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানের একটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচিত্র স্বাধীনতার ৪০ বছর পর উপহার দিয়েছেন বলা যায়।
n
nএর সিনেমাটোগ্রাফি অসাধারন।প্রতিটি দৃশ্যকে তিনি শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন।বিলকিসের একাকীত্বের মূহূর্ত,চুপ করে থাকা,রেলগাড়িতে মুক্তির নি:শ্বাস নেয়ার দৃশ্য,ছোটভাই খোকনের স্মৃতিচারন এমনভাবে চিত্রায়ীত হয়েছে যা প্রত্যেকের হৃদয় ছুঁয়েছে।ছোটভাই খোকনের মৃতদেহের মাথায় হাত বুলিয়ে বিলকিস দু হাতের অঞ্জলীতে যখন তুলে ধরল একটি শালিক পাখি, তখন বুকের ভিতরটা হু হু করে উঠল।
n
nব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকের নির্বাচন এবং উপস্থাপনা ও ছিল নিঁখুত।আলতাফের কিছু গান নতুন করে শুনে আবারও উজ্জীবীত হলাম।সত্যিই তিনি বাংলা দেশগানের যে একজন শ্রেস্ঠ সুরকার তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।বিশেষ করে ঐ গানটা,”জয় সত্যের জয়,জয় প্রেমের জয়”।আর যে রবীন্দ্রসংগীতগুলো দেয়া হয়েছে সেগুলোও সাধারন দর্শকের কাছে শ্রুতিমধুরতো বটেই মনকেও জাগিয়েছে।
n
nঅভিনয়ের কথা না বললেই নয়।প্রত্যেক অভিনেতাকে মনে হল তার সবটুকু ঢেলে দিয়েছেন এখানে।জয়া আহসান ভাল অভিনেতা জানতাম কিন্তু এই চলচিত্রে মনে হল তিনি নতুন করে জন্মালেন আরেক জয়া হয়ে।বিলকিস চরিত্রে নিজেকেও ছাড়িয়ে গেলেন তিনি।শেষ দৃশ্যে গ্রেনেড হাতে জয়ার হাসি শয়তানের ও ঘুম কেড়ে নেবে।আর রেল লাইনের উপর দিয়ে তিনি যখন হাটছিলেন ত্রস্ত পায়ে তখন তার বাড়ি ফেরার টান দর্শকের মাঝেও সঞ্চারীত হল।রেলগাড়িতে বোরকা অনাবৃত করে রাখার পর সাহসিনী বিলকিসের মুখাবয়বে যে আগুন ধরা পড়ল তা একজন সাহসী ৭১ এর গেরিলাকেই সবার সামনে তুলে ধরে।
n
nআলতাফ মাহমুদের চরিত্রটি কল্পিত নয়।আহমেদ রুবেল সাবলীল অভিনয় দিয়ে তাকে আরো জীবন্ত করেছেন।পাক আর্মি এসে যখন জিজ্ঞেস করল,”হু ইজ আলতাফ মাহমুদ?”মাথা উচু করে দাড়িয়ে দৃপ্তকন্ঠে বললেন,”আমি ই আলতাফ মাহমুদ”বেজে উঠল সেই আমোঘ সংগীত যা শুধু এমন বীরের জন্যই রচিত,”বল বীর চির উন্নত মম শির”।কাজী নজরুলের রচিত ‘বিদ্রোহ”কবিতাটির এ সংগীতরূপ এবং উপস্থাপনা আমাদের চেতনায় করাঘাত করেছে।
n
nশতাব্দী ওয়াদুদের জায়গায় পাকি অফিসার হিসেবে আর কাউকে ভাবতে পারছিনা বলেই তার করা একসাথে দুটি চরিত্র একই মনে হল বেশি করে।সত্যিকার অর্থে তিনি সফল।একজন ভিলেন (তাও আবার পাক আর্মি চরিত্রে) ও যে ভাল অভিনয় দিয়ে দর্শকের আগ্রহ কাড়তে পারেন তা তার সুঅভিনয় দেখেই বোঝা গেল।তাই ঢাকার পাক অফিসার যখন গুলিতে মরল দর্শকের হাততালি যেন থামতেই চায়নি।
n
nআর প্রভাবশালী ব্যাক্তি সৈয়দ সাহেব হিসেবে এটি এম শামসুজ্জামান বারবার এসেছেন ত্রানকর্তা হিসেবে কয়েকটি দৃশ্যে।তার শক্তিশালী অভিনয়ে চরিত্রটি ততকালীন সময়কে আরো বাস্তব করেছে।
n
nভাবনা ও মূল বক্তব্যে চলচিত্রটি বেশ সিরিয়াস হলেও তাকে কীভাবে উপভোগযোগ্য করে উপস্থাপন করা যায় তা বিশিস্ট পরিচালক ভালই জানেন।কিছু কিছু দৃশ্যে দর্শক হাসবে।মানে ব্যাপক আনন্দ পাবে।যেমন বিলকিসের বিয়ের পরে বন্ধুদের নিয়ে নৌকা ভ্রমনের স্মৃতিচারণে-“এক দফা এক দাবি,মুরগী মসল্লা ভুনা খিচুড়ী।”তারপর রেলগাড়িতে ফেরিওয়ালার ওষুধ ফেরী করার সময়ের ডায়ালগগুলো।
n
n
n
nএবার আসি শেষ কথায়,পরিচালক চলচিত্রটি শেষ করেছেন বেশ চমকপ্রদভাবে। বিলকিস ও চন্দনকে যখন হাতেনাতে ধরে মিলিটারী ক্যাম্পে আনা হল বিলকিস তখন চন্দনকে পরিচয় দেয় নিজের আপন ছোট ভাই “সিরাজ” নামে।যখন ধরা পড়ে,ছেলেটি আসলে হিন্দু তখন মেজর বিলকিস কে হিন্দু মনে করে আরো বেশি আল্হাদিত হয়ে এগিয়ে যায় তার দিকে।ঠিক সেই মুহূর্তে বিলকিস গ্রেনেড ছুড়ে দেয় ।শেষ দৃশ্যটির মূল ভাব মূলত পুরো চলচিত্রটির ই মূলভাব।একজন সত্যিকারের গেরিলা কখোনো কোনো অন্যায়ের কাছে ধরা দেয় না।নয় কোনো অসম্মান কিংবা সাম্প্রদায়িকতা।শেষ দৃশ্যটি এও বলে দেয় যে, আমাদের জাতীয়তাবাদের শিকড় হিন্দু মুসলীম সম্পৃতির উপর হাজার বছর ধরে নির্মিত বাংগালী জাতিয়তাবাদ।যাকে তথাকথিত ইসলাম ধর্মের জুজু দেখিয়ে ভেঙে দেয়ার চেস্টা করা হলে সে চেস্টাকে বাংগালী জীবন দিয়ে হলেও নস্যাত করে দেবে।
n
nআমাদের দেশে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষকরা সিনেমাহলে যাবেন সিনেমা দেখতে, এই সংস্কৃতি এখনো গড়ে ওঠেনি।কিন্তু আমি শিক্ষকদের অনুরোধ করছি যেন তারা অন্তত “গেরিলা”চলচিত্রটি শিক্ষার্থীদের দেখান।আমি নিজে যদি শিক্ষক হই অবশ্যই আমি আমার শিক্ষার্থীদেরকে দেখাবো। কারন এমন চলচিত্রই ”গেরিলা”যা শুধু বিনোদন ই নয়,আমাদের লুপ্ত দেশাত্ব চেতনাকে জাগ্রত করে এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাসকে উপস্থাপন করে।
n
nধন্যবাদ দিচ্ছি সৈয়দ শামসুল হককে যার উপন্যাস”নিষিদ্ধ লোবান”অবলম্বনে লেখা হয়েছে এর চিত্রনাট্য।আর অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি নাসিরউদ্দীন ইউসুফকে যিনি তাঁর অক্লান্ত সাধনায় রূপালী পর্দায় তুলে ধরেছেন গেরিলাকে।তিনি নিজে অসীম সাহসী একজন গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন বলেই পুরো ছবিটিতে মূর্ত হয়ে উঠেছে দেশের প্রতি তার আবেগীয় ভালবাসা।এখানেও তিনি জয়ী হয়েছেন ৭১ এর মতোই।৭১ এ যেমন জন্ম হয়ে ছিল বাংলাদেশ নামক একটি ফিনিক্স পাখির তেমনি এই চলচিত্রও আশা করি জন্ম দেবে হাজার হাজার বিলকিসের যারা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িকতার হাত থেকে বাঁচাতে লড়বে শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত।
n
nপুনশ্চ:সৈয়দ শামসুল হকের উপন্যাস “নিষিদ্ধ লোবান”এবং পরিচালক নাসিরউদ্দীন ইউসুফের ৭১ এর কিছু প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার সম্মিলনে তৈরি হয় “গেরিলা”র চিত্রনাট্য।

n

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts