0 Comments

n
n
nঅনেকদিন পরে একটি হাউজফুল বাংলা ছবি দেখা হল। ফেসবুকে কিছুদিন ধরে আমার হোম পেজে বিতর্কটা ঘুরে ফিরে আসছিল। কিন্তু আবার উচ্ছাসের জোয়ার ও ছিল এবং সেটার পাল্লাই ভারী হচ্ছে দিন দিন। একসময় দেখলাম ফেসবুকের হোমপেজের দর্শক দু’ভাগ হয়ে গিয়েছে, একভাগ যারা আয়নাবাজী দেখেছে, আরেক ভাগ হল যারা দেখেনি। আজ আমি নিজেও প্রথমোক্ত দলের হয়ে গেলাম। এবং দেখে যেটা বুঝলাম, আসলে বিতর্ক কেন ছবিটা নিয়ে সেটাই বোঝা হল না। অমিতাভ রেজা খুব ভাল বিজ্ঞাপন চিত্র নির্মাণ করেন। এটি উনার প্রথম চলচিত্র। তাই দর্শকের একটা প্রত্যাশা ও কৌতুহল ছিল এমনিই। এবং হলে যাবার পরে সেটা প্রত্যাশা ও ভাললাগা ছাপিয়ে মুগ্ধতায়  পর্যবশিত হল।
n
nসুশিক্ষীত চলচিত্র বোদ্ধা আমি নই, তাই খুব বেশি কিছু বলতে পারবো না। তাছাড়া আজ কোন ভাল না লাগা দিক নিয়ে বলব না এই ছবির। কারন, বাংলা ছবি সাধারণত বেশিরভাগ দর্শক হলে গিয়ে দেখেনা। তাই এই হাউজফুল ব্যবসা সফল ছবিটি ঘিরে আমাদের অনেক আশা এখন, কারণ সব শ্রেনীর দর্শক হলমুখী হয়েছে যা দেশের চলচিত্রের জন্য শুভ লক্ষণ। আমাদের দেশে এক শাকিব খান কেন্দ্রীক হয়ে যাচ্ছিল যেন সবকিছু। মধ্যবিত্ত ও রুচিশীল দর্শকের সেসবে মন উঠত না, মধ্যবিত্ত বিনোদনের জন্য মুখাপেক্ষি  কলকাতা, হলিউড-বলিউডের ছবিতে। হলে বাংলা ছবি দেখাটা হয়ে উঠেছিল উপলক্ষকেন্দ্রীক। তাই শেষ কোন বাংলা ছবির জন্য দর্শককে কালো বাজার থেকে টিকেট কিনতে হয়েছিল বা কোন ছবিটি ২ সপ্তাহের বেশি হাউজফুল ছিল সেটা জানার জন্য রীতিমত ইতিহাস ঘাটতে হবে। আমাদের চলচিত্র শিল্প ভুগছে আসলে ভাল প্রযোজক ও ভাল পরিচালক স্বল্পতায়। আর কোন সমস্যা ছিল না, নেইও। যেকোন ভাল পরিচালক ভাল টাকা পেলে অভিনেতা অভিনেত্রীদের ভেঙ্গে গড়তে পারেন সেটা আবারও প্রমাণিত হল।
n
n
n
nযে কারণে মূলত ভাল লেগেছে আয়নাবাজীঃ
n
n১। দারুন সিনেমাটোগ্রাফী ও আবহ সংগীত। এ্যত সুন্দর ঢাকা দেখানোর জন্য একটি ধন্যবাদ প্রাপ্য হয়ে গিয়েছে অমিতাভ ও তার দলের।
n
n২। অর্নবের গানের কথা, সুর সবসময়ই দারুন সেই সাথে নিখুঁত চিত্রায়ণ মনকে হালকা করেছে।
n
n৩। কাহিনীটা ছিল একটু অন্যরকম। পরিচালক ও কাহিনীকারের সমগ্র কাহিনীতে এবং ছোট ছোট ঘটনায় ও দায়বদ্ধতার ছাপ সুস্পস্ট। কাহিনীকার ও স্ক্রিপ্ট রাইটারের কল্যানে ব্যপক বিনোদনমূলক কথোপকথন পেলাম বেশকিছু, ঘটনার বাঁকে বাঁকে মজার সংলাপ। বিশেষত, যখন মূল অভিনেত্রীর বাবা যানযটে পরে অ্যাম্বুলেন্সে মারা গেল। তারপর, লালবাগ কেল্লায় সাংবাদিককে বলা আয়নার কথাঃ “এইটা একটা ঐতিহাসিক জায়গা, বাদামের খোশা ফেলে নোংরা করবেন না”। এরকম আরো অনেক সংলাপ ও ছোট ছোট ঘটনার দেখা মিলবে যা আমাদের বাংলা ছবির স্বকিয় ও দারুন বৈশিস্ট্য।
n
n৪। চঞ্চলের সুপার অভিনয়। একই সাথে অনেকগুলো চরিত্রে সুনিপুনভাবে অভিনয়ের জন্য প্রতীভা লাগে। মঞ্চের পাক্কা অভিনেতা ছাড়া খুব কম অভিনেতাই এ্যতটা সফলতা পাবার ক্ষমতা রাখেন।
n
n৫। তথাকথিত বাণিজ্যিক ছবির মশলা মারামারি, কাটাকাটি,নাচ, গানসহ অতিমানবীয় ব্যপার স্যাপার না থাকায় অনেক গন্ড মূর্খ এঁকে আবার বড় নাটক বা টেলিফিল্মের সাথে তুলনা করতে উদ্যত হতে পারেন, তবে সে যুক্তি যুতসই হবে না। কাহিনীর ক্লাইম্যাক্স, চঞ্চলের অতিমানবীয় অভিনয় আর অসাধারণ পরিচালনা এঁকে রীতিমত বাণিজ্যেক ছবি হিসেবেই উপস্থাপন করতে সফল হয়েছে। আর আজকাল আর্ট ফিল্ম ও কমার্শিয়াল ফিল্ম এই টার্ম দুটির কোন মানে নেই। এখন সব ছবিই বাণিজ্যিক। তথাকথিত অবাস্তব মশলাদার ফিল্মের দিন শেষ।
n
n৬। বেশকিছু বিষয় পেলাম কাহিনীতে যেগুলো ফ্যাক্ট। সৎ ও সাহসী সাংবাদিক এর ব্যক্তিগত জীবন দেখানো হল। দেখানো হল তার দাম্পত্য জীবনে তিনি অসুখী এবং বিচ্ছেদপ্রাপ্ত। তিনি মদ পান করেন ব্যর্থতা ভোলার জন্য। কিন্তু নিজের সৎ ইচ্ছার জোরে লেগে আছেন সত্য অনুসন্ধানে। নিঃসন্দেহে আমাদের দেশের Perspective এ সাধারণ দর্শকের মনোজগতে এ চরিত্রটি অবচেতনে বড় ধরণের প্রভাব ফেলবে। দর্শককে অবচেতনে প্রশ্ন জাগিয়ে যাবে যে, মদ্যপ মানেই কি লুচ্চা ? এবং এর উত্তর হল -না। তবে এটা ঠিক এ্যত অন্যায় ও বিচারহীনতার সমাজে এ্যমন একজন সৎ সাংবাদিক এর অবস্থান খুবই দূর্বল। তার উপর তার ব্যক্তিগত জীবন এলোমেলো থাকায় তিনি আরো দূর্বল। তিনি আয়নার ভূমিকা চিহ্নিত করতে পেরেছেন, কিন্তু শেষতক বাঁচাতে পারেননি আয়নাকে। আয়না বেঁচে গিয়েছে নিজ গুনে। সুশিক্ষীত ও প্রগতিশীল হবার পরেও আধুনিক সমাজের ব্যক্তিত্বের যে দ্বন্দ্ব, তা মানুষকে একা ও দূর্বল করে। সে সঠিকভাবে সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করতে পারেনা, পৌছায়না যোগ্য স্থানে। তাই সমাজ অযোগ্যদের হাতে চলে যায়। বাড়তে থাকে ক্ষমতার অপব্যবহার, বিচারহীনতা এবং সৃস্টি হয় আয়নাবাজীর।
n
n৭। জেলখানা জায়গাটা যে ছোট খাটো আরেকটি পৃথিবী তা অনেকেই জানেনা। এ ছবিটি দেখলে হয়তো সবাই কিছুটা বুঝবে। লাবু মিয়ার চরিত্র থেকে বোঝা যায়, জেলখানায় কর্তৃপক্ষের আচরণ এ্যতই বৈষম্যময় যে সে অবশেষে মানসিক রোগীতে রূপান্তরিত হয়। সামান্য ভাল ব্যবহারেই সে অত্যাধিক সম্মোহিত হয়ে পরে আয়নার দ্বারা।
n
nযাহোক, ভাল লেগেছে নাবিলার অভিনয়। এই ছবিতে সব বাছা বাছা মুখ নিয়েছেন অমিতাভ। এরকম আরো ডজন খানেক ছবি দরকার প্রতি বছর। তাহলে আশা করা যায় বাংলা ছবির দূর্দিন শেষ হবে। হলমালিকদের বাণিজ্যের খরাও শেষ হবে। আয়নাবাজী টিমকে অভিনন্দন ও শুভকামনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts