0 Comments

n

n

n

n

n

nরাস্তায় মানুষের ঢল নেমেছে,বিদ্ধস্ত চেহারার সব মানুষ। তাদের চলার ছন্দে শ্রান্তি,মুখাবয়বে ক্লান্তি আর চোখে উদ্ভ্রান্তি। চারদিকে গতসপ্তাহের ঝড়ের সাক্ষি হিসেবে রেখে যাওয়া ধ্বংসলীলার নগ্ন ছাপ। বড় বড় বয়েসী মেহগনী গাছগুলো এখনো রাস্তার পাশে পড়ে আছে হেড়ে যাওয়া সৈনিকের মত।

n

nপাতারহাট বাজার। মাঝারি আকারের টিনের বেড়া দেয়া চালগুলোর কিছু কিছুর মেরামতকাজ চলছে। শুধু ১ জায়গায় অবস্থানরত তিনটি দোকানঘর এখনও চরম বিদ্ধস্ততার চিহ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

n

nশোভন দোকানগুলোর সামনে এসে ক্যামেরায় হাত রাখল। ক্লিক করল কয়েকবার। দেখল ছবিগুলো। “নাহ্ ঠিকাছে”। তারপর চায়ের উদ্দেশ্যে রাস্তার ঠিক উল্টোদিকে পলিথিনের ছাউনি দেয়া  ১টা অস্থায়ী চা দোকানের দিকে পা বাড়াল। ঢাকা থেকে তার মত প্রায় জনা বিশেক সাংবাদিক এসেছে এদিকে,তাকে যেতে আরো অনেক জায়গায়। চা হাতে নিয়ে সে ঠিক করল এরপরই সে স্মরণখোলায় যাবে। স্থানীয় রিপোর্টারের বরাতে জানা গেছে সেখানে সিডরে নাকি সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। সে চা খেতে খেতে সামনের দিকে তাকাল। দোকানগুলোর পিছনদিকে বয়ে গেছে ১টা সরু খাল। সেখানে ঘোলা জল তীব্র স্রোতে বয়ে চলেছে।খালের ওপারে বড় মাঠ,স্কুল। মাঠ আর রাস্তার মাঝে ছোট শাঁকও।

n

nরাস্তা দিয়ে হেটে চলা মানুষগুলোর গন্তব্য স্কুলমাঠ। কারণ সেখানে এখন শুরু হবে তাদের পত্রিকার ত্রাণ কার্যক্রম। তারা যে ফান্ড সংগ্রহ করেছে সেটা মোটা অংকের হওয়া সত্তেও এখানকার সর্বশান্ত মানুষগলোর এক তৃতীয়াংশ চাহিদাও মিটছে না। সরকারী সাহায্য ও আসছে কম না। কিন্তু কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছে না।

n

nহঠাৎ ১টা কোলাহল শোনা গেল। ভীড়ের আয়তন ক্রমশই বাড়ছে। কারোর ই যেন লাইনে দাড়ানোর ধৈর্য নেই। ১টা বিন্দুকে কেন্দ্র করে সবাই হাত উঠিয়ে চেচামেচি শুরু করেছে। শোভন বিল মিটিয়ে এগিয়ে গেল সেদিকে। সেখানে পৌঁছে দেখল কয়েকজন কর্মী ত্রাণ সামগ্রী,১টা টেবিল ও ১টা চেয়ার এনে কেবল রেখেছে।
সে চেয়ারটির উপর উঠে ঘোষনা করার ভংগীতে বলল,”আপনারা সবাই থামুন। শান্ত হয়ে লাইনে দাড়ান। আমরা প্রত্যেককে ২কেজি চাল,১টা শাড়ী ও ১টা লুংগী দেবো। আপনারা যতক্ষন না শান্ত হবেন ততকখন আমরা কোন কাজ শুরু করবো না”। তার কথায় ভীড়টা একটু তরল হলেও লাইন ধরলনা কেউ।
কিছুক্ষনের মধ্যেই সে পুরুষ ও মহিলাদের দুটো লাইন করে দিল।

n

nদুপুর গড়িয়ে বিকেল নামল। শোভন দুই সারির মাঝে দাড়িয়ে চোখে ক্যামেরা আটকে মাঝে মাঝে ছবি তুলছে।

n

nএমন সময় ১টা ময়লা জামা হাফ প্যান্ট পড়া ছেলে,বয়স ১১ বা ১২ হবে হাত পাতল ত্রান নেয়ার জন্য। পাশে দাড়ানো ত্রান কর্মীটি সন্দেহের চোখে তাকালো তার দিকে,”এই তুই সকালবেলায় এসেছিলি না? দেখি, হাত দেখি।”
আংগুলে কালীর ছাপ ধরা পড়ল।
“তোকে আর দেয়া হবেনা। যা বের হ।”
ছেলেটি:”না ছার আর এ্যাট্টা শাড়ি দ্যান মোর মার লইগ্যা।”
কর্মীটি মাথা নেড়ে আরেকজন কর্মীর দিকে তাকাল। সেই কর্মী ছেলেটিকে বের করে দেবার জন্য ধরতে যেতেই ছেলেটি ১টা শাড়ী তুলে নিয়ে এক দৌড় লাগাল।হতচকিত শোভন দ্রুত একদৌড়ে ধরে ফেলল ছেলেটিকে। খামচে,চিমটি দিয়ে আর কামড়ে হাত ছাড়ানোর আপ্রাণ চেস্টা করতে লাগল ছেলেটি। শেষপর্যন্ত শোভন তাকে নিরস্ত করার জন্য একটু বেশিজোড়েই চড় কষাল। এবার ছেলেটি ভেংগে পড়ল কান্নায়,”ছার,মাফ কইররা দ্যান। মোগো সব ভাইস্যা গ্যাছে। মোর আব্বা মরছে। আম্মার পার উফার গাছ পড়ছে। আইতে পারে নায় এইহানে। ছার হ্যার লাইগ্যা আর এ্যাট্টা শাড়ী নেতে আইছেলাম।”

n

nশোভন নির্বাক,স্তব্ধ হয়ে গেল। ঘোরের মাথায় ছেলেটির হাত থেকে ছিনিয়ে নেয়া শাড়িটি পড়ে গেল মাটিতে। মুঠো আলগা হতেই ছেলেটি দৌড়ে পালিয়ে গেল।শাড়িটি পড়ে রইল মাটিতেই।

n

n০২ রা মে, ২০১০ বিকাল ৪:১০ |

n

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Posts